হোম লোনের সুবিধা ও অসুবিধা সম্পর্কে বিস্তারিত

  আজ আমি আপনাদের সাথে আলোচনা করব হোম লোন কি? হোম লোনের সুবিধা অসুবিধা সম্পর্কে জানব এবং কিভাবে আমরা হোম লোন নিবো এবং হোম লোন না নিয়ে অন্য কি উপায়ে আমরা টাকা ব্যবস্থা করে বাসা বা ব্যবসা দাঁড় করাতে পারি সে সম্পর্ক আলোচনা করব।


আশা করি এ ব্লগের মাধ্যমে আপনি হোম লোনের সুবিধা অসুবিধা সম্পর্কে বিস্তারিত একটা জ্ঞান অর্জন করবেন এবং আপনি সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন।

সূচিপত্র ; হোম লোনের সুবিধা অসুবিধা

  • হোম লোন কি?
  • হোম লোনের সুবিধা ও অসুবিধা।
  • হোম লোন নেয়ার আগে করনীয় কি?
  • হোম লোনের বিকল্প উপায়।
  • হোম লোনের বিকল্প উপায়।

হোম লোন কি?

হোম লোন (Home Loan) হল একটি ঋণ যা ব্যক্তি বা পরিবারকে দেয়া হয় বাড়ি বা ফ্ল্যাট  কেনার জন্য ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান প্রদান করে । এর ঋণের মাধ্যমে ব্যক্তি বা  পরিবার তাদের ভবিষ্যৎ বাড়ি বা ফ্ল্যাটকেনার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ সংগ্রহ করতে পারে এবং ঋণের টাকা কিস্তিতে পরিশোধ করতে থাকে। যদি কোন ব্যক্তির কাছে বাড়ি বা ফ্ল্যাট কেনার জন্য বড় অংকের অর্থ না থাকে তাহলে সে হোম লোনের মাধ্যমে অর্থ নিয়ে একটি বাড়ি তৈরি করতে পারে এবং পরবর্তীতে তা কিস্তিতে আস্তে আস্তে পরিশোধ করতে পারে এটাকেই হোম লোন বলা হয়।

হোম লোনের সুবিধা ও অসুবিধা।

হোম লোন নেয়ার পূর্বে অবশ্যই হোম লোনের সুবিধার ও অসুবিধা সম্পর্কে জেনে নেয়া উচিত। কোন কিছু সম্পর্কে একটা ভালো ধারণা থাকলে আমাদের পরে বিপদে পড়ার কম থাকে। এবং আমাদের উদ্দেশ্য সফল করা সহজ হয়ে ওঠে। তাই আমি এখন আপনাদেরকে হোম লোন এর সুবিধা ও অসুবিধা সম্পর্কে পয়েন্ট আকারে বিস্তারিত তুলে ধরবো।

হোম লোনের সুবিধা-

  • অর্থ সঞ্চয় না করে নিজস্ব বাড়ি বা ফ্ল্যাট কেনার সুযোগ।
হোম লোনের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, আপনি নিজের বাড়ি বা ফ্ল্যাট কেনার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ সঞ্চয় না করেও তা অর্জন করতে পারেন। ঋণ নিয়ে আপনি এখনই বাড়ি কিনে তারপর কিস্তিতে পরিশোধ করতে পারেন।

  • দীর্ঘ মেয়াদে পরিশোধ সুযোগ।
হোম লোন সাধারণত ১০ থেকে ৩০ বছর মেয়াদী হয়। এবং কিস্তিটা মাসিক হয় ফলে ঋণগ্রিতা জন্য মাসিক কিস্তি অনেক কম হয়। এর ফলে আর্থিক চাপটা কম হয় ।
  • স্বল্প সুদের হার।
সাধারণত অন্য লোনের তুলনায় হোম লোনের সুদের হার কম হয়। কারণ এটি একটি সুরক্ষিত ঋণ আর গ্যারান্টি হিসেবে আপনার বাড়ি বা ফ্ল্যাট টি থাকে।
  • সম্পত্তির মূল্যবৃদ্ধি।
বর্তমান যুগের সময়ের সাথে সাথে বাড়ি জিনিসপত্র সবকিছুই দাম বৃদ্ধি পায়। যেহেতু হোম লোন একটি দীর্ঘমেয়াদী ঋণ প্রক্রিয়া সুতরাং আপনি হোম লোনের মাধ্যমে একটি বাড়ি ক্রয় করলে ধীরে ধীরে আপনার বাড়িটির দাম বৃদ্ধি পাবে অর্থাৎ আপনার লোন পরিশোধ হওয়ার পূর্বে আপনার বাড়িটির দাম বেশি হতে পারে সুতরাং আপনি একটি লাভের আশা করতে পারেন।
  • স্বাধীনতার অনুভূতি।
নিজের নিজস্ব বা ব্যক্তিগত একটি বাড়ির সবারই স্বপ্ন। আপনি হোম লোন এর মাধ্যমে একটি বাড়ি ক্রয় করলে আপনি একটি বাড়ির মালিক হয়ে যাবেন এবং আপনার মধ্যে একটা স্বাধীনতার অনুভূতি জন্মাবে। নিজস্ব বাড়ি হলে আপনার ভাড়া থাকা লাগবেনা সুতরাং আপনার ভাড়ার টাকাটা বেঁচে যাচ্ছে। এছাড়াও আপনি আপনার লোন নিয়া বাড়িতে অন্য মানুষকে ভাড়া দিয়ে সে অর্থ দিয়েও ধীরে ধীরে লোন শোধ করতে পারেন।
  • ক্রেডিট স্কোরের উন্নতি।
সময়মতো হোম লোনের কিস্তি পরিশোধ করলে আপনার ক্রেডিট স্কোর উন্নত হয়, যা ভবিষ্যতে অন্য ঋণ নিতে সহায়ক হতে পারে।

বাড়ির সংস্কারবা পূর্ণ নির্মাণের সুবিধা
শুধু বাড়ি কেনা বা তৈরির জন্য নয়, বরং বাড়ি সংস্কার, পুনর্নির্মাণ বা সম্প্রসারণের জন্যও হোম লোন পাওয়া যায়।
  • পরিবারের আর্থিক সুরক্ষা
হোম লোনের মাধ্যমে আপনি একটি বাড়ি ক্রয় করে আপনার পরিবারকে আর্থিক সুরক্ষা প্রদান করতে পারেন।

 হোম লোনের অসুবিধা-

যদিও হোম লোনের অনেক সুবিধা আছে তবুও কিছু কিছু ক্ষেত্রে হোম লোন এর মাধ্যমে চাপ সৃষ্টি করতে পারে। তাহলে চলুন জেনে নিই হোম লোনের অসুবিধা গুলো।
  • ঋণের বোঝা মাসিক বাজেটের উপর চাপ।
হোম লোনের যেহেতু মাসিক কিস্তি প্রদান করতে হয় এর ফলে আপনার মাসিক আয়ের অধিকাংশই লোনের পিছনে চলে যাবে ফলে আপনার মাসের বাজেটের উপর একটা প্রভাব ফেলবে। অর্থাৎ আপনার ইনকামের পরিমাণ না বাড়লে আপনার সাধারণ জীবন যাপনে একটু কষ্টসাধ্য হবে।
  • সম্পদের বাজেট মূল্য।
যেহেতু বর্তমান সময়ে সম্পদের দাম উঠানামা হয় তাই আপনি হোম লোনেরমাধ্যমে একটি বাড়ি ক্রয় করার পর যদি সম্পদের দাম কমে যায় তাহলে আপনি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
  • সুদের হারের জন্য ন্যায্য বাড়ির মূল্যের অবনতি।
যদিও অন্যান্য সুদের হারের তুলনায় হোম লোনের সুদের হার কম তবুও যেহেতু এটা অনেক বছরের লোন সেহেতু আপনার বাড়ি করতে যে পরিমাণ অর্থ ক্রয় হতো দীর্ঘমেয়াদি সুধ দেয়ার ফলে তার চেয়ে অধিক অর্থ দিতে পারে।
  • ডাউন পেমেন্ট।
হোম লোন নেয়ার জন্য আপনাকে দশ থেকে বিশ পার্সেন্ট পর্যন্ত ডাউন পেমেন্ট দিতে হয় যেটা আপনার জন্য চ্যালেঞ্জিং।
  • জরিমানার সম্মুখীন হওয়া।
আপনি হোম লোন নেয়ার পর যদি সঠিক সময়ে ঋণ পরিশোধ করতে না পারেন বা সঠিকভাবে কিস্তি প্রদান না করতে পারেন তাহলে আপনার জন্য জরিমানা করা হবে।
  • ঋণ নিয়ার জটিল প্রক্রিয়া।
হোম লোন নেয়ার জন্য আপনাকে বিভিন্ন ধরনের কাগজপত্র দিতে হয় এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে আপনার ইনকামের প্রমাণ, ব্যক্তিগত পরিচয় পত্র এবং বাড়ির কাগজপত্র।

হোম লোন নেয়ার আগে করনীয় কি?

হোম লোন নেয়ার পূর্বে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আছে যেগুলো আপনাকে ভালোভাবে যাচাই বাছাই করে নিতে হবে না হলে আপনি পরবর্তীতে বিপদের সম্মুখীন হতে পারেন।

  •  আপনার আর্থিক অবস্থা মূল্যায়ন করুন।
আপনার বর্তমান আয় এবং মাসিক খরচটা হিসাব করুন। আপনি মাসিক কিস্তি বহন করার ক্ষমতা রাখেন কি সেটা যাচাই বাছাই করুন।

  • ঋণের সুদের হার এবং শর্তাবলী যাচাই করুন।
সুদের হারঃ বিভিন্ন জায়গায় সুদেরার বিভিন্ন হয় অর্থাৎ কোন প্রতিষ্ঠানে কম কোন প্রতিষ্ঠানে বেশি আপনি চেষ্টা করবেন যাচাই বাছাই করে কম সুদের হার আছে এমন প্রতিষ্ঠান থেকে হোম লোন নেওয়ার এর ফলে আপনার টাকা কিছুটা সাশ্রয় হবে।

  • ফ্লোটিং বা ফিক্সড রেট।
সুদ হার স্থির (ফিক্সড) নাকি পরিবর্তনশীল (ফ্লোটিং) সেটা জানুন, কারণ পরিবর্তনশীল সুদ হার ভবিষ্যতে ঋণের পরিমাণ বাড়াতে পারে।

  • ঋণের পরিমাণ এবং মেয়াদ নির্ধারণ করুন।
আপনার ঋণের পরিমাণ নির্ধারণ করুন এবং আপনার মাসিক আয়ের সাথে সেটা যাচাই-বাছাই করুন।ঋণের মেয়াদ দীর্ঘ হলে মাসিক কিস্তি কম হলেও দীর্ঘ সময়ে মোট সুদ অনেক বেশি হয়ে যেতে পারে।

  • ক্রেডিট স্কোর চেক করুন।
ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান ঋণ প্রদান করার আগে আপনার ক্রেডিট স্কোর চেক করবে। একটি ভালো ক্রেডিট স্কোর (৭৫০ বা তার বেশি) আপনাকে কম সুদে ঋণ পেতে সাহায্য করবে।

  • ঋণ পরিশোধের সম্ভাব্য ঝুঁকি বুঝুন
হোম লোন নেওয়ার সাথে সম্পর্কিত ঝুঁকি যেমন, অসুস্থতা, চাকরি হারানো, বা অন্যান্য অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতির জন্য আপনি কোনও বিমা বা সঞ্চয় পরিকল্পনা রাখছেন কিনা তা নিশ্চিত করুন।

হোম লোনের বিকল্প উপায়।

হোম লোন ছাড়াও হোম লোনের বিকল্প উপায় হিসেবে কিছু মাধ্যম আছে যা ব্যবহার করে আপনি বারবার ফ্ল্যাট কেনার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ সংগ্রহ করতে পারেন।

  • পারিবারিক ঋণ।
আপনি আপনার নিকট আত্মীয়-স্বজনের থেকে প্রয়োজনীয় অর্থ ঋণ করতে পারেন এবং তা পরবর্তীতে আস্তে আস্তে পরিশোধ করতে পারেন। এতে আপনার সুদের ঝামেলাটা থাকবে না।

  • একত্রে বাড়ি নির্মাণ।
যদি আপনার কাছে বাড়ি তৈরির জন্য প্রয়োজনে তুলনায় অর্থ কম থাকে তাহলে আপনি আপনার কাছের কোন বন্ধু বা আত্মীয় স্বজনের সাথে শেয়ারের মাধ্যমে বাড়ি নির্মাণ করতে পারেন এবং পরবর্তীতে তা আসতে ধীরে শোধ করতে পারেন অথবা বাসা ভাড়া প্রদানের মাধ্যমে অর্থটা শোধ করতে পারেন।

  • প্রপার্টি বা জমি বিক্রয়।
আপনার যদি জমি পরিমাণ বেশি থাকে তাহলে আপনি সে জমি বিক্রির মাধ্যমে একটি নতুন ফ্ল্যাট বা বাড়ি তৈরি করতে পারেন। এতে করে আপনার ঋণ বা সুদের কোন ঝামেলাই থাকে না।

  • ব্যক্তিগত সঞ্চয়।
বাড়ি বা ফ্ল্যাট কিনার জন্য হোম লোন না নিয়ে যদি আপনার মাসিক বেতন থেকে টাকা সঞ্চয় করে বাড়িটা ফ্ল্যাট ক্রয় করা।

  • স্বল্পমেয়াদী ঋণ: 
হোম লোনের পরিবর্তে স্বল্প মেয়াদের ঋণ গ্রহণ। এর ফলে আপনি সুদের হার কম পড়বে।

হোম লোন সম্পর্কে উপসংহার।

মোটকথা, হোম লোন একটি গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক সহায়তা, তবে এর জন্য সঠিক পরিকল্পনা, গবেষণা এবং সংবেদনশীলতা প্রয়োজন। ঋণগ্রহীতাদের উচিত সুদের হার, পরিশোধের সময়কাল এবং অন্যান্য শর্তাবলী বুঝে নেওয়া, যাতে ভবিষ্যতে আর্থিক চাপ কম হয়।

এই আর্টিকেলে হোম লোনের সুবিধা অসুবিধা সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হয়েছে। আশা করি আর্টিকেলটির মাধ্যমে আপনি উপকৃত হয়েছেন। তবে আবারো বলবো কোন সিদ্ধান্ত নেয়ার পূর্বে পরিবারের সদস্যের সাথে আলোচনা করবেন এবং সবকিছু বিচার বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিবেন।


Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url